Twitter

যাত্রার 15 বছর Twitter বিশ্বের অন্যতম একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে। Twitter এর কারনেই অনলাইন Microblogging concept এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে যাকে আমরা সাধারণ ভাষায় Twitter করা বলে থাকি। যদিও যদিও ইউজাররা ফ্রিতে টুইটার ব্যবহার করে আসছে তবুও 2020 সালের টুইটার এর রিভিনিউ পরিমাণ ছিল 3.7 বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ঠিক কীভাবে এই প্লাটফরমটি এত বড় রেভিনিউ জেনারেট করে?


টুইটার ইতিহাস

ইভ উইলিয়ামস, নোয়া গ্লাস, বিজ স্টোন (Ev Williams, Noah Glass, Biz Stone) (ODEO) নামে একটি পডকাস্ট এগ্রিগেটর এবং পাবলিশিং প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতেন। এই প্রযুক্তিতে একসময় জ্যাক ডরসি (Jack Dorsey) যুক্ত হন, যিনি ইভ উইলিয়ামস কাছে একটি টেক্সট মেসেজ ভিত্তিক স্ট্যাটাস আপডেটিং প্ল্যাটফর্ম আইডিয়া দেন। আইডিয়াটি পছন্দ হলে তারা সেটা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় এবং নোয়া গ্লাস এই নতুন প্রোজেক্টের জন্য টুইটার (Twitter) নামটি সিলেট করেন।

2006 সালের 21 শে মার্চ অফিশিয়ালি লঞ্চ হওয়ার পর অনলাইন মাইক্রো ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এর সিনোনিম হয়ে ওঠে টুইটার। প্ল্যাটফর্মটিতে ইউজাররা ছবি এবং ভিডিওটা একসাথে করে শট স্ট্যাটাস আপডেট পোস্ট করতে পারে। প্রাথমিকভাবে কনক্রিটের ক্যাপচার লিমিট ছিল 140 টি যা 2017 সালে বাড়িয়ে 280 করা হয়। টুইটারের ওপেন ট্রান্সপারেন্ট নীতির কারণে প্ল্যাটফর্মটিতে যেকোনো ধরনের কনটেন্ট এর উপর খুব কমই রেস্ট্রিকশন থাকে। এছাড়াও এছাড়াও ইউজারদের সাথে real-time ব্যস্ততা সুবিধা, সেলিব্রিটি এবং ফ্রেন্ডের জন্য এনে দিয়েছে খুব ইউনিক সুযোগ। প্ল্যাটফর্মটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে টেকস্যাভি জেনারেশন সাথে সহজে ইনফেকশনের জন্য বিশ্বব্যাপী অ্যাক্টিভিস্ট পলিটিশিয়ান লিডাররা প্লাটফরমটি আরোপ করে নেয়। Horse magazine একটি তথ্যসূত্র USA এর 44 তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ফাস্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্রেসিডেন্ট বলা হয়ে থাকে। ইউজারদের সাথে খুব সহজেই ইন্ট্রোডাকশন এর পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মটিতে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকের তুলনায় ফেক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা খুবই কম। Statista একটি তথ্যসূত্র টুইটারে যেখানে ফেক অ্যাকাউন্টের পরিমাণ মাত্র 4% সেখানে ফেসবুক এর পরিমাণ 16 শতাংশ। যার ফলে সেলিব্রেটি, সাংবাদিক, নিউজ মিডিয়া, ব্রাঞ্চ এমনকি পলিটিশিয়ানরা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকে টুইটারকে বেশি পছন্দ করে।

Statista আরো একটি তথ্যসূত্র 2021 সালের জুলাই মাসে টুইটার মনটিজাবলে ডেইলি একটিভ ইউজারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে 206 মিলন। প্ল্যাটফর্মটির ইউজাররা প্রতিদিন 500 মিলিয়ন টুইট করে এবং 2020 সালের মে মাসের হিসাব অনুযায়ী বছরে গড়ে 200 মিলিয়ন টুইট করা হয়। প্ল্যাটফর্মটির ইউজাররা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ও ফেসবুক ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম গুলোর মতই টুইটার ও ফ্রিতে ব্যবহার করছে। এরপর 2020 সালের টুইটারে রেভিনিউ পরিমাণ ছিল 3.7 মিলিয়ন ডলার যা 2015 সালের 2.2 বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ তুলনায় 168 শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বর্তমানে টুইটারের মার্কেট ক্যাপিটালিজটিও এর পরিমাণ ছিল 50 বিলিয়ন ডলারের।

চলুন জেনে নিই টুইটার কিভাবে আয় করে?

টুইটার মূলত তাদের প্ল্যাটফর্মের ইউজারদের প্রেফারেন্স, ডেমোগ্রাফিক্স, লোকেশন, একটিভিটি (Preference, Demographics, Location, Activity) বিভিন্ন ইনফর্মেশন তাদের ডেটাবেস এ স্টোর করে রাখে। ইউজারদের এসব ইনফর্মেশন ব্যবহার করে বেশ কয়েক ভাবে টুইটার রেভিনিউ জেনারেট করে থাকে। এদের মধ্যে বিজ্ঞাপন পরিষেবা, ডেটা লাইসেন্সিং এই দুই ভাবে সবচেয়ে বেশি রেভিনিউ জেনারেট করে থাকে।

টুইটার 2010 সালের এপ্রিলে নিজেদের প্লাটফর্মে এডভার্টাইজিং সার্ভিস অফার করতে শুরু করে। 2020 সালের টুইটারের এই সার্ভিস থেকে 86% বা 3.2 বিলিয়ন ডলার জেনারেট হয়। টুইটারে এডভার্টাইসিং সার্ভিস এর মধ্যে তিনটি প্রডাক্ট রয়েছে যেগুলো হলো প্রমোটেড টুইটার, প্রমোটেড একাউন্ট এবং প্রোমোটেড ট্রেন্ডস (Promoted Accounts, Promoted Accounts, Promoted Trends)। ইউজাররা প্রতিদিন যে টুইটগুলো দেখতে পায় সেগুলির মধ্যে কিছু টুইট থাকে যেগুলো প্রমোটেড টুইট হিসেবে দেখানো হয়। ইউজারের ইন্টারেস্ট অনুযায়ী রিলেটিভ ব্র্যান্ড বা কোম্পানিগুলোর প্রমোটেড টুইট টাইমলাইনে দেখানো হয়।

বিশ্বের অনেক কোম্পানি টুইটারে সার্ভিসটি তাদের কোম্পানির বিভিন্ন অ্যানাউন্সমেন্ট জন্য ব্যবহার করে থাকে আবার এই প্রমোটেড টুইটগুলো পলিটিক্স সেলিব্রেটিরা মানুষের কাছে তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করেন। টুইটারের ডাটাবেজে থাকা ইউজারদের ইনফরমেশন ব্যবহার করে করে তাদের কাছে Who to follow নামের অপশন এ কিছু অ্যাকাউন্ট সাজেস্ট করা হয়। নতুন ব্র্যান্ড গুলো নিজেদের প্রমোট করা ছাড়াও স্ট্রাবোলীগ ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের নানান ক্যাম্পেন গুলো এখানে বুস্ট করতে পারে। এটি ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো তাদের প্রতি ইন্টারেস্টেড ইউজারদের একটি ভার্চুয়াল কমিউনিটি তৈরি করতে পারে। টুইটারের ট্রেন্ডিং টপিকস বলতে এমন টপিক বুঝায় যা নিয়ে টুইটারের ইউজাররা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করছে। ট্রেন্ডিং টপিকস গুলোকে টুইটার এক্সপ্রেস সেকশনে ডিসপ্লে করা হয়। ট্রেন্ডিং টপিকস ইউজার ডাটা যেমন ডেমোগ্রাফিক, লোকেশন, ইউজার প্রেফারেন্সেস, লাইক, ডিসলাইক এর উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। প্রমোটেড ট্রেন্ড হ্যাটট্রিকসহ দেয়া হয়, কোম্পানী বা ব্র্যান্ডগুলো তাদের হ্যাসটেগ কোন প্রমোট করার মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটিতে এক ধরনের যোগাযোগ ক্রিয়েট করতে পারে।

Promoted Accounts, Promoted Accounts, Promoted Trends এই তিন ধরনের প্রোডাক্ট আবার 5 টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে অফার করা হয়। সেই পাঁচটি ক্যাটেগরি হচ্ছে Promoted Ads, Follower Ads, Twitter Ampliy, Twitter Takeover, Twitter Live। এডভারটাইস সার্ভিস সরাও টুইটার ডাটা এনালাইসিস এর মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করে থাকে। প্রতিদিন টুইটার প্ল্যাটফর্মটিতে যে লক্ষ লক্ষ টুইট সেখানে প্রচুর পরিমাণে যে ডাটা থাকে যা টুইটার নিজের মত করে নিষ্কাশন এবং সংরক্ষণ করতে পারে। টুইটার ডাটা এনালাইসিস এর মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির ডেভলপারদের কাছে এটা ব্যবহার করে সাবস্ক্রিপশন বিক্রি করে থাকে। শুধুমাত্র শুধুমাত্র টুইটারের পার্টনার যে সকল কোম্পানির টুইটারের প্রিমিয়াম API বা অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিংয়ের ইন্টারফেস এর সাবস্ক্রিপশন ব্যবহার করছে তারাই পাবলিক টুইটার রিয়েল টাইম ডাটা সার্স ও এনালাইজ করতে পারে করতে। এই ডাটাগুলো এনালাইজ ও এভালুয়াতে করে এই বিজনেস গুলো তাদের কাস্টমারের চাহিদার উপর ভাবে বুঝতে পারে এবং এবং তাদের কাস্টমারদের জন্য আরও একটি প্রোডাক্ট ডিজাইন করতে পারে। 2013 সালের mopub নামে একটি মোবাইল এডভার্টাইজিং এক্সচেঞ্জ সার্ভিস প্রোভাইডার প্ল্যাটফর্ম কে কিনে নেয়।

এই প্লাটফরমটি ব্যবহার করে মোবাইলে ডেভলপাররা খুব সহজেই ইউজার ইন্টারফেস কি সেক্রিফাইস না করি তাদের এক থেকে মনিটাইজ করতে পারত। এই mopub থেকে 2020 সালে 128 মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। কিন্তু 2021 সালের 6 অক্টোবর টুইটার ঘোষণা দেয় যে তারা 1.05 বিলিয়ন ডোলারে Applovin নামে একটি মোবাইল গেম মার্কেটিং কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। mopub বিক্রি এনাউসমেন্ট টুইটারের সিইও Jack Dorsey বলেন যে mopub বিক্রির ফলে তারা তাদের রেভিনিউ এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দিকে থেকে আরও বেশি ফোকাস করতে পারবেন।