গোল্ডের

গোল্ড বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান ধাতু গুলোর মধ্যে অন্যতম। আমেরিকার বিজনেস টাইকুন ইনভেস্টর এবং ফোলজের তালিকা একসময় বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী খেতাব পাওয়া ওয়ারেন বাফেট (Warren Buffett) সম্প্রতি ব্যারিক (Barrick) গোল্ড একটি গোল্ডমাইন কোম্পানির স্টারবাকস, তার বার্কশায়ার হাটাওয়ে (BERKSHIRE HATAWAY) পোর্টফোলিও এড করেন। যদিও গোল্ডের ইনভেস্টের প্রতি সবসময় ওয়ারেন বাফেটের বেশ অনীহা ছিল। কিন্তু পিছনের কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাজারে গোল্ডের দাম বেশ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এর পেছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে গোল্ড এর ইনট্রানজেক্ট ভ্যালু। বিশ্বের যেকোনো জায়গায় যাওয়া হোক না কেন, প্রতিটি স্থানে গোল্ড এর ভ্যালু একি রকম থাকে।

প্রাচীনকাল থেকে প্রায় সকল সভ্য তাদের গোল্ড বেশ গুরুত্ব বহন করে এসেছে। জুয়েলারি ও উপাসনার কাজে গোল্ড এর ব্যবহার শুরু হলেও খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ সালে গোল্ড কে কয়েন এ রুপান্তর করে রূপান্তর করে অর্থ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। তবে তারও আগে থেকেই গোল্ড বিনিময় প্রথায় ব্যবহার হয়ে আসছিল। এমনকি বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি এবং মনিটরিং সিস্টেম গোল্ড নির্ভরশীল ছিল। অর্থনৈতিক নীতিমালায় পরিবর্তনের কারনে বর্তমানে কারেন্সি সেই কানেকশন না থাকলেও কোর্টের সাথে সেই থাকলেও এসিডি হিসেবে গোল্ড বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয়। যার ফলে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে গোল্ড এর ভ্যালু সব সময় প্রায় সমান থাকে। রিটেল মার্কেটে সাধারণ জনগণের জন্য হয়তো প্রায়শই কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে কিন্তু, মার্চিং খুবই সামান্য। তবে এসিডির জন্য একটি নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে গোল্ড এর ভ্যালু বিশ্ব ব্যাপী একটি ফিক্সড অ্যামাউন্ট থাকে। এর পেছনের মূল কারণ হচ্ছে গোল্ড প্রাইস কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে সেট করা হয় যারা ফিউচার অফ মারকেটে গোল্ডের সাপ্লাই ও ডিমান্ড ক্যালকুলেট করে অ্যাভারেজ স্পিড প্রাইস আর ফিক্স প্রাইস নির্ণয় করে। যুক্তরাষ্ট্র (Conex) এবং যুক্তরাজ্যের (LBMA) অ্যাসোসিয়েশন গোল্ড মার্কেট পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। প্রিজারভেটিভ মার্কেট গোল্ড এর সাপ্লাই ও ডিমান্ড এর পাশাপাশি বিভিন্ন মেজর কারেন্সি ফ্লাকচুয়েশনও গোল্ড এর ভ্যালু নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অন্যদিকে সাধারন জনগনের জন্য রিটেল মার্কেটিং গোল্ডের স্পোর্টস এর সাথে রিফাইনিং, হ্যান্ডলিং, ট্রান্সপোর্ট, ডিলার মার্জিন এসব কিছু এড করা হয়। যার ফলে নির্ধারিত প্রাইস থেকে রিটেল মার্কেট এ গোল্ডের কিছুটা বেশি হয় তবে গোল্ডের ফিক্স প্রাইস থেকে সেই ভ্যালুর আকাশ-পাতাল তারতম্য থাকে না। কিন্তু কেন গোল্ড এর ভ্যালু বিশ্বব্যাপী একই রকম রাখা হয়? সুপ্রাচীন কাল থেকেই সারা বিশ্বে বিনিময় প্রথার মাধ্যমে সবার কাছে এক্সেপ্টেড ছিল। বর্তমানে ফ্রী মার্কেট সিস্টেমের ও গোল্ড কে কারেন্সি হিসেবে কনসিডার করা হয়। যেকোনো কমেডিটির চেয়ে গোল্ড খুব সহজেই বিক্রি করে যে কোন পেপার কারেন্সি তে কনভার্ট করা যায়। এমনকি ইকনোমিক ডিপ্রেশন ইম্প্রেশন সহ বিভিন্ন কারণে কাগজের নোট ভ্যালুয়েশনে হারলেও গোল্ডের ইউনিভার্সের এক্সেপশন কারণে এই মূল্যবান ধাতু দূষণে ভ্যালুয়েশনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। ইনফ্যাক্ট গোল্ড এর ভ্যালু একমাত্র গ্লোবাল কোন ইভেন্ট এর ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। তবে গোল্ডের প্রাইস এ বড় ধরনের পরিবর্তনের যেন না আসে সেই জন্য বেশ কিছু ফাইলস অফ মেজার ও রয়েছে।

গোল্ড কারেন্সি হিসেবে কনসিডার হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বর্তমানের পেপার কারেন্সি গোল্ড এর বিপরীতে ভ্যালুয়েশনে করা হতো। যদিও 1944 সালে ব্রিট্টন উডস এগ্রিমেন্ট (Bretton Woods agreement) এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কারেন্সি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যকার ভ্যালুয়েশনে করা শুরু করা হলেও তখন পর্যন্ত US কারেন্সি গোল্ড এর উপরে নির্ভরশীল ছিল। অর্থাৎ বিশ্বের ট্রেডিং ইউএস কারেন্সিতে করা হলেও তা মূলত গোল্ডের ভ্যালুয়েশনে ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু 971 সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইউএস ডলার কে গোল্ড এর সাথে ডিলিঙ্ক করাব সৃষ্টি হয় আজকের কারেন্ট সিস্টেমের।


এতে করেই US কারেন্সি ভ্যালুয়েশনে আর গোল্ডের উপর নির্ভরশীল না থেকে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। তবে এর ফলে গোল্ডের ভ্যালু কিন্তু কমে আসে নি, বরঞ্চ গোল্ডকে এখনো বিশ্বের অন্যতম স্টেবল এসিড হিসেবে ধরা হয়। মানুষ অনেক আগে থেকেই গোল্ডকে এসিড হিসেবে কাউন্সিলর এসেছে। ইন্ডিয়ান sub-continent সহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে গোল্ড জুয়েলারি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও প্রায় সব কালচারেই এসিড হিসেবে কনসিডার করা হয়। যদিও জুয়েলারি ছাড়াও সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে গোল্ড এর ব্যবহারের। কিন্তু এর মাত্রা খুবই সামান্য। তবে বিশ্বের অনেক দেশেই ইনভেস্টমেন্ট এর মাধ্যমে গোল্ড বিস্কিট বার এবং কয়েন বেচাকেনা করা হয়। যার ফলে কমিডিটি ছাড়াও এসিড হিসেবে গোল্ডের ইন্ট্রিন্সিক ভ্যালু রয়েছে। যেহেতু ইউনিভার্সিটি এসিড হিসেবে কনসিডার করা হয় তাই বিশ্বব্যাপী গোল্ড এর ডিমান্ড সবসময় বিদ্যমান। তবে এই বিদ্যমান ডিমান্ড এর বিপরীতে গোল্ডের সাপ্লাই কিন্তু নির্দিষ্ট। 2008 সালে বিশ্বব্যাপী 4345 মেট্রিকটন গোল্ডে এর ডিমান্ড ছিল, যার বিপরিত 4490 মেট্রিকটন গোল্ড সাপ্লাই করা হয়েছিল।

যেহেতু গোল্ড ন্যাচারাল রিসোর্স এবং বহুকাল আগে থেকেই মাইন হয়ে আসছে, তাই গোল্ডের রিসার্ভ এবং সাপ্লাই সীমিত। বর্তমান গ্লোবাল সাপ্লাই প্রায় এক-চতুর্থাংশ রিসাইকেল থেকে। অর্থাৎ চাইলেই বেশি পরিমাণ গোল্ড রিফাইন করে গোল্ডের দামে বড় ধরনের ধস নামানো সম্ভব নয়। গোল্ডের ডিমান্ড সাপ্লাই এ ধরনের সমন্বয় কারণে গোল্ডের ভ্যালুয়েশন বিশ্বব্যাপী সকল ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম থাকে। গ্লোবাল মার্কেটে গোল্ডের দামের তারতম্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রিটেল মার্কেটে প্রভাব ফেলেও রিটেল মার্কেট এর দামও বিশ্বব্যাপি প্রায় কাছাকাছি থাকে। সেজন্যেই ইনভেসমেন্ট অফ হিসেবে গোল্ড বেশ ভালো।