IMO ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এবং অডিও ভিডিও কলিং এর জন্য বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফ্রি multi-platform অ্যাপ। বিবিসির একটি তথ্যসূত্রে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী 150 টিরও বেশি দেশে 200 মিলিয়নের বেশি মানুষ IMO ব্যবহার করে যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য প্ল্যাটফর্মটির সবচেয়ে বড় মার্কেট. বর্তমানে অ্যাপটি মোট ২০ ভাষায় ব্যবহার করা যায়। ঢাকা ট্রিবিউনের একটি তথ্যসূত্রে কেবল 2020 সালের বাংলাদেশ ইউজাররা 96 বিলিয়ন মেসেজ এবং 26 বিলিয়ন অডিও ভিডিও কল করেছে। যদিও IMO তে সাইনআপ এবং মেসেজিং অডিও ভিডিও কল এর মত বেসিক সার্ভিস ব্যবহারের জন্য কোন প্রকার চার্জ করা হয় না। তাহলে এই ম্যাসেজিং প্লাটফরমটি আদতে কিভাবে আয় করে? 2005 সালে টেক এন্থুসিয়াস্ট দুই ভাই রালফ এবং জর্জেস হারিক (Ralph and Georges Harik) এর হাত ধরেই USA ক্যালিফোর্নিয়াতে একটি ওয়েব বেইজ ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্লাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করে. এর আগে জর্জ হারিক 1999 থেকে গুগলে কাজ করেছিলেন এবং রালফ হারিক পড়েগেলে কর্মরত ছিলেন. Google এ থাকাকালীন জিমেইল পিকাসা গুগল এডসেন্স এবং এডওয়ার্ডস অনলাইনের মত প্রজেক্টগুলোর সাথে জড়িত থাকার ফলে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনের ওপর জর্জেস বেস্ট এক্সপেরিয়েন্স ছিলেন. গুগলে চাকরির সুবাদে জর্জেস ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন এবং তার ভাইকে উৎসাহিত করেন একটি ইউজার ইন্টারফেসের অধীনে মাল্টিপেল ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে সক্ষম এমন একটি ওয়েব বেস্ট অ্যাপ ডেভেলপ করতে। সে সময়ে মেসেজিং সার্ভিস গুলো শুধুমাত্র উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএস এর জন্যই ডেভেলপ করা হতো ফলে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের ইউজাররা ইন্সট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস গুলো অ্যাক্সেস করতে পারত না। মূলত অপারেটিং সিস্টেম যা-ই থাকুক না কেন ইউজাররা যেন একটি প্ল্যাটফর্ম থেকেই সকল ধরনের ইনস্তন্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য IMO একটি ওয়েব ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ডেভলপ করা হয়েছে।
কিন্তু IMO এমন একটি ওয়েব ভিত্তিক এপ্লিকেশন সফটওয়্যার ছিল যা সব ওয়েস ইউজার IMO এর পাশাপাশি অন্যান্য third-party ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম গুলো অ্যাক্সেস করতে পারত। এরপর তারা ধীরে ধীরে ওয়েব ভার্সন এর মত IMO এর মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের কাজ করতে থাকেন এবং অ্যাপটিতে ফেসবুক মেসেঞ্জার ইয়াহু মেসেঞ্জার গুগোল টক যাবার এবং স্কাইপ এর মত জনপ্রিয় ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম গুলো ব্যবহারের সুযোগ এড করেন। 2010 সালে 10.3 মিলিয়ন ডলারের সিরিজ এরাউন্ড ফান্ডিং এবং 2013 সালে ক-ফাউন্ডার জর্জেস-হারিকর কাছ থেকে 13 দশমিক 3 বিলিয়ন ডলারের সিরিজ-বি রাউন্ড ফান্ডিং পায় IMO। একই বছরে একটি ব্রডকাস্টিং ফিচার লঞ্চ করেছিল যেখানে একটি নির্দিষ্ট জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন এর মধ্যে থাকা ইউজাররা একে অপরের সাথে পাবলিকলি চ্যাট করতে পারে। 2013 সালের মধ্যে IMO দৈনিক 50 মিলিয়ান মেসেজ সাড়ে সাত লক্ষ ভিজিট এবং মোবাইলে 7 মিলিয়ন ডাউনলোড রেকর্ড করেছে। পরের বছর আইমো একটি multi-platform ভিডিও কলিং সার্ভিস চালু করে। যদিও 2014 মার্চ মাসে আয় মোর সকল third-party ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের সাপোর্ট বন্ধ করার ঘোষণা দেয় এবং নিজেদের ইন্সট্যান্ট মেসেজিং ও কলিং ফীচার দিকে ফোকাস করতে থাকে। 2018 সালে কোম্পানিটি 500 মিলিয়ন ডাউনলোডের মাইলস্টোন অতিক্রম করে। জুমিনফো (Zoominfo) এর মতে 2021 সালের সেকেন্ড কোয়ার্টারে কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী 5.9 মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। 14 বছরের যাত্রা ইন্সট্যান্ট মেসেজিং ও কলিং এর পাশাপাশি গ্রুপ কল সহ যেকোনো ধরনের ফাইল ট্রান্সফার করার সুযোগ দিচ্ছে।
IMO তে সর্বোচ্চ 10 জিবি ফাইল ট্রান্সফার করা যায়। একটি multi-platform ইনস্ট্যান্ট প্যাকেজিং হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও IMO ধীরে ধীরে একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করছে। চ্যাটরুম ফিচারটির মাধ্যমে IMO একই দেশের ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে বসবাস করা ইউজারদের কানেক্ট করিয়ে দিচ্ছে। যা IMO কম্পেটিটর হোয়াটসঅ্যাপ টেলিগ্রাম ভাইবরের মতো প্লাটফর্ম থেকে IMO কে ডিফারেনশিল করেছে। এছাড়াও IOM স্ট্রিমিং ফিচারটির মাধ্যমে অনেকেই আয় করতে পারছে। ইন্টারন্যাশনাল ব্যাজবাইটস (PageBites) IMO অপারেট করলেও ব্যাজবাইটস মূলত সিঙ্গুলারিটি আইএম (Singularity IM) এর একটি সাবসিডিয়ারি। অন্যদিকে US সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একটি ফাইলিং অনুযায়ী সিঙ্গুলারিটি আইএম মূলত (YYinc.) ব্র্যান্ডের সাবসিডিয়ারি। (YYinc.) ব্র্যান্ডটিত মূলত চাইনিজ ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়া প্রতিষ্ঠান। জয় (Joyy) ইনর্পোরেটজেট। যেটি IMO এবং BIGO লাইভের মত বেশ কয়েকটি ভিডিও বেস্ট লাইভ স্ট্রিমিং ও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম অপারেট করে থাকে। বাংলাদেশে ইন্সট্যান্ট মেসেজিং এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আইমো বহুল জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত একটি প্ল্যাটফরম। ফ্রান্স বেস তথ্যসূত্রের IMO বিশ্বব্যাপী ট্রাফিকের প্রায় 30% সাইট ট্রাফিক নিয়ে টপে আছে বাংলাদেশ। বিবিসি বাংলার এস্টিমেশন সূত্রে 2020 সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে IMO টি 370 মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা হয়েছে। ঢাকা ট্রিবিউন (Dhaka Tribune) একটি রিপোর্ট সূত্রে 2021 সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে IMO মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় 150 মিলিয়ন বার ফ্রি কল ছবি এবং মেসেজ করা হয়।
গ্রামীণফোনের চিফ ডিজিটাল অ্যান্ড ট্রাজেডি অফিসার মিস্টার সোলায়মান আলম এর মতে বাংলাদেশে IMO এমন জনপ্রিয়তার পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে দুর্বল ও আনস্টেবল ইন্টারনেট এবং কম ডাটা খরচ অ্যাপটি স্মুথ ইউজ করা যায়। IMO মেসেজ কমপ্লিট হয়ে যাওয়ার ফলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ইন্টারনেট কানেকশনও স্ট্যাবল কানেক্টিভিটি মেইনটেইন করতে পারে। বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেট স্পিড বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে গুলোতে বেশি অস্থিতিশীল যার ফলে বাংলাদেশের প্ল্যাটফর্মটির অনেক বেশি ইউজার রয়েছে। বাংলাদেশে IMO জনপ্রিয়তার পেছনে সেকেন্ড ফ্যাক্টরটি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিক বসবাস করে মধ্যপ্রাচ্যে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জার টেলিগ্রাম ভাইবার সহ সকল ধরনের ভিওআইপি কলিং নিষিদ্ধ হলেও আইনের মাধ্যমে অডিও ও ভিডিও কল করা যায়। এছাড়া অন্যান্য অ্যাপ গুলোর তুলনায় ইন্টারফেস বেশ সহজ যার ফলে IMO মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের কাছে পপুলার আর তাই তাদের ফ্যামিলি মেম্বাররা দেশে IMO ব্যবহার করে।
এখন চলুন জেনে নিই ইমু কিভাবে রেভিনিউ জেনারেট করে থাকে:
IMO মূলত চারটি সোর্সস থেকে রেভিনিউ জেনারেট করে যা হল ডাটা ডেটা বিক্রয়, ইন-অ্যাপ ক্রয়, বিজ্ঞাপন, প্রিমিয়াম পরিষেবা (Data selling, In-App Purchase, Advertisement, Premium service)। অ্যাপ্লিকেশনটি কল লগ ডেটা, আইপি অ্যাড্রেস, কুকিজ, লোকেশন, চ্যাটিং হিস্টোরি, ইউজার সেটিং বা সমষ্টিগত ইউজার ডাটা যেমন ডেমোগ্রাফিক সংখ্যা লেনদেনের সংখ্যা এবং ইমেইলের মতো মূল্যবান ইউজার ইনফরমেশন গুলো সংগ্রহ করে। এ ধরনের তথ্য প্লাটফর্মটি বিভিন্ন থার্ড পার্টির কাছে সেল করে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য আয়ের উৎস হচ্ছে third-party অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখানো। অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মতোই IMO তাদের প্লাটফর্মে টার্গেটেড এড রান করে থাকে। আর এই বিজ্ঞাপনগুলো চ্যাট হিস্ট্রি লেস ডালিং প্রিন্ট এবং অ্যাপ এর অন্যান্য স্থানে দেখানো হয়। বিজনেস ব্র্যান্ড এবং যে কারও জন্যই (IMO Ads) নামে আলাদা অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যা ব্যবহার করে আইমো ইউজারদের অ্যাড দেখানো যায়। অ্যাপ্লিকেশনটিতে কোন ব্যক্তি বা বিজনেস তাদের পণ্য বা সার্ভিস এর লিংক এটাচ করে টার্গেট অডিয়েন্স এবং বিজ্ঞাপনের জন্য বাজেট সিলেক্ট করতে পারে।
IMO ইউজারদেরকে সাবস্ক্রিপশন ফি এর বিনিময় প্রিমিয়াম সার্ভিসও অফার করে থাকে। ইউজাররা প্রিমিয়াম সার্ভিসের সাবস্ক্রিপশন করলে 25gb ক্লাউড স্টোরেজ নো-এডস সার্ভিসের মত সুবিধা উপভোগ করতে পারবে। IMO ইউজারদের বিভিন্ন মেয়াদের সাবস্ক্রিপশন ফি যেমন এক মাসের প্রিমিয়াম সার্ভিসের জন্য প্রায় 1 ডলার এবং এক বছরের জন্য 10 ডলার চার্জ করা হয়। সাবস্ক্রিপশন ফি ছাড়াও IMO তাদের ইউজারদের জন্য বিভিন্ন ভার্চুয়াল আইটেমের করেছে। ইউজারা ইন-অ্যাপ ক্রয়ের মাধ্যমে ডায়মন কিনতে পারেন পরবর্তীতে IMO প্রিমিয়াম সার্ভিস প্রিমিয়াম স্টিকার অথবা অন্যকোন ইউজারকে গিফট পাঠাতে কিংবা লাইভ স্ট্রিম লাইভস্ট্রীমার হোস্টদের ফতগিফট পাঠাতে এসব ডায়মন্ড ব্যবহার করতে পারেন। IMO ক্রমাগত তাদের প্ল্যাটফর্মটিতে নতুন নতুন ফিচার যোগ করে চলছে যেমন 2020 সালের নভেম্বর মাসে প্লে টুগেদার (Play together) নামে ফিচার এড করে যা ইউজারকে তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে একটি স্ক্রিন শেয়ার এর মাধ্যমে সিনেমা দেখা কিংবা গান শোনার জন্য একটি গ্রুপে ইনভাইট করার সুযোগ করে দেয়। অন্যান্য অ্যাপ থেকে IMO সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো অ্যাপ টি রিজিয়ার ইউজার ইন্টারফেস এবং ইউজাররা একে অপরের সাথে খুব সহজেই কানেক্টেড হতে পারে বলে সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে অ্যাপটি এত পপুলারিটি পেয়েছে।
0 Comments