আচ্ছা আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় ছোটবেলায় আপনি প্রথম যে কলমটি দিয়ে লিখেছিলেন সেটি মনে আছে কিনা? যদি আপনি বাংলাদেশের হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বলবেন ইকোনো ডিএক্স (ECONO DX)। বলা যায় আশি থেকে নব্বই দশকের যারা আছি তারা প্রায় সবাই ইকোনো ডিএক্স কলম দিয়ে লেখা শুরু করেছি। ইকোনো ডিএক্স শুধু আমাদের ছোটবেলার পছন্দের বলপেনে ছিল না বরং বাংলাদেশের বলপেনের ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে তারা পিছিয়ে পড়ে এবং একটা সময় তারা মার্কেট থেকে প্রায় হারিয়ে যায়। কিন্তু এর পেছনে কী কারণ ছিল? আমাদের আজকের প্রতিবেদন সে বিষয়গুলো নিয়েই যাবো আপনাদের। ইকোনো বলপেনের প্রতিষ্ঠাতা জিকিউ গ্রুপ (GQ-Group) 1981 সালে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানিটি 1988 সালে প্রথম বলপেন প্রস্তুত করা শুরু করে দেয়। তাদের প্রথম বলপয়েন্ট ইকোনো ডিএক্স নামে ব্র্যান্ডিং করা হয়। সেসময় বল পেনের দাম ধরা হয় মাত্র তিন টাকা।
দাম খুব রিজেনেবল হওয়ায় সবার চাহিদার শীর্ষে ছিল ইকোনো ডিএক্স। খুব অল্পসময়ের মধ্যেই স্কুল কলেজ এবং অফিসসহ প্রায় সব জায়গায় বলপেন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও বাড়তে থাকে ইকোনোর সেল। বলপেনটির সাফল্যে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই GQ এর রেভিনিউ দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়। 1993 সালে GQ এর রেভিনিউ ছিল 25 কোটি টাকা। ইকোনোর বিপুল পরিমাণ সেল এর পেছনের কারণ ছিলো তারা খুব সাশ্রয়ী মূল্যে সবার কাছে বলপেন পৌঁছতে পেরেছিল। 1997 ছিল GQ এর জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। সে বছর তাদের রেভিনিউ ছিল প্রায় 40 কোটি টাকা এভাবে বেশ কিছুদিন মার্কেটের নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম ছিল ইকোনো ডিএক্স। সে পর্যন্ত সবকিছু ভালই যাচ্ছিল তাদের জন্য। কিন্তু তারপর 1998 সালে মার্কেটে আসা ম্যাটাডোর। ম্যাটাডোর এর বলপেন গুলোর সাথে ইকোনো ডিএক্স এর বেশ পার্থক্য ছিল। ম্যাটাডোর বলপেন গুলো রাবার ফিনিশিং হওয়া লিখতে খুব কমফোরটেবল ফিল হত। তাছাড়া ম্যারাডোনার নিব অত্যন্ত সূক্ষ্ম হওয়ায় খুব স্মোথলী লেখা যেত. অপরদিকে ইকোনো ডিএক্স কোন প্রকার রাবার ফিনিশিং ছিলনা। প্লাস্টিক মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি ষড়ভুজ আকৃতির ডিজাইন ছিল ইকোনোতে।
যার ফলে এই বল বলপেতটি দিয়ে লিখতে খুব একটা কম্ফোর্টেবল ফিল হতো না। আবার ইকোনো ডিএক্স নিব গুলো কিছুটা মোটা হওয়া স্মোথলী লেখা যেত না। মাঝে মাঝে লেখার সময় কালিও ছড়িয়ে যেত। তবে একটু সমস্যা ছিল এর কালি কলম এর ভিতরে জমে যেত। কেননা ইকোনোর বলপেন গুলো এমন ভাবে ডিজাইন করা ছিল যেখানে পেছন থেকে ছোট্ট একটি ছিদ্র ছিল। অনেক সময় পকেটের রাখলেও কালি বেরিয়ে যেত বলপেন থেকে। কিন্তু ম্যাটাডোর বলপেন গুলোতে ছোট্ট একটি পিন দিয়ে থাকার কারণে কালি জমে বের যেত না। এসকল কারণে ম্যাটাডোর বলপেন গুলোর দাম ইকোনোর থেকে কিছুটা বেশি হওয়া সত্বেও সবার ম্যাটাডোর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হতে থাকে। তাছাড়া ম্যাটাডোরের অ্যাট্রাক্টিভ ডিজাইন এবং বিভিন্ন কালারের বলবলপেন তুলনায় ইকোনোর ওর হাতে গোনা দুই তিনটি ডিজাইনের বলপেন ছিল। এভাবেই ধীরে ধীরে ম্যাটাডোর মার্কেট শেয়ার কেড়ে নিতে থাকে। 1997 সালে 40 কোটি থেকে 2003 সালে GQ রেভিনিউ 22.5 কোটি টাকায় নেমে যায়, 2004 সালে GQ 0.5 মিলিমিটারের নিব সম্বলিত ইকোনো ডিএক্স বলপেনটি মার্কেটে লঞ্চ করে। কিন্তু ততদিনে ম্যাটাডোর অনেকাংশেই মার্কেট দখল করে ফেলে।
তাছাড়া মেরিট এবং অলিম্পিকের মতো কোম্পানিগুলো তাদের বলপয়েন্ট বাজারজাত করার ফলে ইকোনো ডিএক্স আরো পিছিয়ে পড়ে এবং তাদের হারানো মার্কেট শেয়ার আর ফিরে পায়নি। 2007 সালে দ্বিতীয় রেভিনিউ কমে 17 কোটি টাকায় নেমে যায় 2008 সালে তারা সেল বাড়ানোর লক্ষ্যে ইকোনোর আরো বেশ কিছু মডেলের বলপেন বাজারে লঞ্চ করে। কিন্তু ম্যাটাডোর এবং অন্যান্য বলপেন কোম্পানি গুলোর তুলনায় তাদের মার্কেটিং এবং এডভার্টাইজিং এতটা উন্নত ছিল না। সেরকম কোন টিভিসি এন্ড এডভার্টাইসিং লক্ষ্য নিয়ে ছিল না ইকোনোর। এর ফলশ্রুতিতে ইকোনো বলতে গেলে প্রায় মার্কেট থেকে হারিয়ে যায়।
0 Comments